রবিবার, ০৫ মে ২০২৪, ০২:৫২ পূর্বাহ্ন

বিস্ফোরক মামলা এখনো সাক্ষ্যগ্রহণে আটকা

বিস্ফোরক মামলা এখনো সাক্ষ্যগ্রহণে আটকা

স্বদেশ ডেস্ক:

বিডিআর (বর্তমানে বিজিবি) সদর দপ্তর পিলখানায় সংঘটিত নৃশংস হত্যাকাণ্ডের এক যুগ আজ। ২০০৯ সালের ২৫ ও ২৬ ফেব্রুয়ারির ওই হত্যাকা-ে ৫৭ জন চৌকস সেনা অফিসারসহ ৭৪ জন নিহত হন। এ ঘটনায় হত্যা ও বিস্ফোরক আইনে দুটি মামলা হয়। এর মধ্যে হত্যা মামলার বিচার হাইকোর্টে শেষ হয়ে আপিল বিভাগে বিচারাধীন। কিন্তু বিস্ফোরক আইনে করা মামলাটির বিচার এখনো অধস্তন আদালতেই শেষ হয়নি।

হত্যা মামলায় হাইকোর্টের রায়ের কপি পেয়ে আসামিপক্ষ ও রাষ্ট্রপক্ষ ইতোমধ্যে ৭১টি আপিল ও ফৌজদারি আবেদন করেছে আপিল বিভাগে। এর মধ্যে ৫১টি আপিল করেছে আসামিপক্ষ। এসব আপিলে হাইকোর্টে মৃত্যুদ-প্রাপ্ত ও যাবজ্জীবন দ-প্রাপ্ত আসামিদের মধ্যে প্রায় ৩০০ জন খালাস চেয়েছেন। বাকি ২০টি ফৌজদারি আবেদন করেছে রাষ্ট্রপক্ষ। হাইকোর্টে যেসব আসামি খালাস পেয়েছেন বা কম সাজা পেয়েছেন, তাদের ক্ষেত্রে সাজা প্রদান ও সাজা বৃদ্ধি চাওয়া হয়েছে এসব আবেদনে। এসব আপিল ও আবেদন এখন শুনানির জন্য প্রস্তুত করা হচ্ছে।

জানতে চাইলে অ্যাটর্নি জেনারেল এএম আমিন উদ্দিন আমাদের সময়কে বলেন, আসামিপক্ষ আপিল করেছে এবং আমরা ২০টি ফৌজদারি আবেদন করেছি। এগুলো এখন শুনানির জন্য প্রস্তুত করা হচ্ছে। প্রস্তুত হয়ে গেলেই আমরা দ্রুততার সঙ্গে আপিল বিভাগে এ মামলার শুনানি করব।

আসামিপক্ষের ৫১টি আপিলের মধ্যে ৪৮টিই করেছেন অ্যাডভোকেট মো. আমিনুল ইসলাম। তিনি আমাদের সময়কে বলেন, ৪৮টি আপিলে ২০৩ জন আসামি রয়েছেন। এর মধ্যে মৃত্যুদ-প্রাপ্ত ৩০ জন। এসব আপিলের সারসংক্ষেপ জমা দিতে হয়। আমরা এখন সারসংক্ষেপ প্রস্তুত করছি। সারসংক্ষেপ জমা দেওয়ার পর আদালত

শুনানির জন্য দিন ধার্য করবেন। তিনি আরও বলেন, এখনো হাইকোর্টে দ-প্রাপ্ত প্রায় দেড়শ আসামি আপিল বিভাগে আপিল করেননি। তারা হয়তো সামনে করবেন। এ কারণে অভিজ্ঞতা থেকে বলতে পারি- এ বছরেও এসব আপিলের শুনানি শুরু করা সম্ভব হবে না।

এই আইনজীবী বিস্ফোরক মামলার অনেক অভিযুক্তেরও আইনজীবী। বিস্ফোরক মামলার ব্যাপারে তিনি বলেন, বিস্ফোরক আইনে করা মামলাটির চার্জশিটে এক হাজার ২৬৪ সাক্ষী রয়েছে। এর মধ্যে এখন পর্যন্ত ১৮৫ জনকে পরীক্ষা করা হয়েছে। সব সাক্ষীকে পরীক্ষা করতে হলে আরও এক যুগেও শেষ হবে কিনা সন্দেহ রয়েছে।

অ্যাডভোকেট আমিনুল আরও বলেন, হত্যা মামলায় অধস্তন আদালত থেকে ২৭৮ জন খালাস পান। ২৫৬ জনের ১০ বছর ও এর চেয়ে কম মেয়াদে সাজা হয়। ইতোমধ্যে তাদের সাজা ভোগ শেষ হয়েছে। তারা সবাই কারামুক্তি পেতে পারতেন। কিন্তু এই খালাস পাওয়া এবং কম সাজাপ্রাপ্ত প্রায় ৫০০ জন বিস্ফোরক মামলারও আসামি। এই মামলার বিচার শেষ না হওয়ায় তারা জামিনও পাচ্ছেন না। এ বিষয়ে রাষ্ট্রপক্ষের নজর দেওয়া উচিত বলে মনে করেন তিনি।

২০০৯ সালের ওই নৃশংস হত্যাকা-ের পর করা মামলার মধ্যে ২০১০ সালের ১২ জুলাই হত্যা মামলায় এবং ২৭ জুলাই বিস্ফোরক আইনের মামলায় চার্জশিট দেয় সিআইডি। ২০১৩ সালের ৫ নভেম্বর ঢাকার তৃতীয় অতিরিক্ত মহানগর দায়রা জজ ড. মো. আখতারুজ্জামান হত্যা মামলার রায় ঘোষণা করেন। পরে ডেথ রেফারেন্স ও আপিলের ওপর দীর্ঘ শুনানি শেষে বিচারপতি মো. শওকত হোসেনের নেতৃত্বাধীন তিন বিচারপতির বৃহত্তর হাইকোর্ট বেঞ্চ ২০১৭ সালের ২৬ নভেম্বর রায় ঘোষণা করেন। রায়ে ১৩৯ জনের মৃত্যুদ- বহাল রাখা হয়। যাবজ্জীবন কারাদ- পান ১৮৫ জন। নিম্নআদালতে বিভিন্ন মেয়াদে কারাদ-প্রাপ্ত ২৫৬ জনের মধ্যে হাইকোর্ট ১৮২ জনকে ১০ বছর করে কারাদ- দেন। এ ছাড়া আটজনকে সাত বছর, চারজনকে তিন বছর এবং দুজনকে ১৩ বছর করে কারাদ- দেন হাইকোর্ট। বাকিদের মধ্যে ২৯ জন খালাস পান, ২৮ জন আপিল না করায় সাজা বহাল থাকে। আপিল শুনানি চলাকালে তিনজন মারা যান।

অন্যদিকে ২০১১ সালের ১০ আগস্ট হত্যা মামলায় অভিযোগ গঠন করে বিচার শুরু হলেও বিস্ফোরক আইনের মামলার বিচার স্থগিত ছিল। হত্যা মামলায় সাক্ষ্যগ্রহণের শেষ পর্যায়ে ২০১৩ সালের ১৩ মে বিস্ফোরক আইনের মামলায় চার্জগঠনের মাধ্যমে বিচার শুরু হয়। এ মামলায় আসামি ৮৩৪ জন।

বিজিবির কর্মসূচি

গতকাল বিজিবির এক বিজ্ঞপ্তিতে বলা হয়, পিলখানায় সংঘটিত বর্বরোচিত হত্যাকা-ে শহীদদের স্মরণে আজ বৃহস্পতিবার শাহাদাতবার্ষিকী পালিত হবে। দিনের কর্মসূচি অনুযায়ী পিলখানায় বিজিবি সদর দপ্তরসহ সব রিজিয়ন, প্রতিষ্ঠান, সেক্টর ও ইউনিটের ব্যবস্থাপনায় খতমে কোরআন, বিজিবির সব মসজিদ এবং বিওপি পর্যায়ে শহীদদের রুহের মাগফিরাত কামনা করে দোয়া ও মিলাদ মাহফিলের আয়োজন করা হয়েছে। সেনাবাহিনীর ব্যবস্থাপনায় আজ সকাল ৯টায় বনানী সামরিক কবরস্থানে রাষ্ট্রপতি ও প্রধানমন্ত্রীর প্রতিনিধি, স্বরাষ্ট্রমন্ত্রী, তিন বাহিনীর প্রধানরা, স্বরাষ্ট্র মন্ত্রণালয়ের জননিরাপত্তা বিভাগের সিনিয়র সচিব এবং বিজিবি মহাপরিচালক শহীদদের স্মৃতিস্তম্ভে পুষ্পস্তবক অর্পণ করবেন। এ ছাড়া দিবসটি পালন উপলক্ষে বিজিবির সব স্থাপনায় বাহিনীর পতাকা অর্ধনমিত থাকবে এবং বিজিবির সব সদস্য কালো ব্যাজ পরিধান করবেন। আগামীকাল শুক্রবার বাদ জুমা পিলখানায় বিজিবি কেন্দ্রীয় মসজিদ, ঢাকা সেক্টর মসজিদ এবং বর্ডার গার্ড হাসপাতাল মসজিদে শহীদদের আত্মার মাগফিরাত কামনা করে বিশেষ দোয়া ও মিলাদ মাহফিল অনুষ্ঠিত হবে।

দয়া করে নিউজটি শেয়ার করুন..

© All rights reserved © 2019 shawdeshnews.Com
Design & Developed BY ThemesBazar.Com
themebashawdesh4547877